স্বদেশ ডেস্ক:
তিনদিনের এক রাষ্ট্রীয় সফরে গতকাল বৃহস্পতিবার ফ্রান্সে পৌঁছেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। আজ শুক্রবার এ নিয়ে মোদি বাস্তিল দিবসের প্যারেডে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন। ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখো মোদির সম্মানে বিশেষ নৈশভোজেরও আয়োজন করছেন। খবর বিবিসির।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মোদির এই ফ্রান্স সফরে বেশ কতগুলো অতি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিরক্ষা সমঝোতা স্বাক্ষরিত হবে বলেও ধারণা করা হচ্ছে। ভারতের বার্তা সংস্থা এএনআই দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সূত্রকে উদ্ধৃত করে রিপোর্ট করেছে, ফ্রান্স থেকে আরও ২৬টি রাফাল জেট এবং ৩টি স্কর্পিওন ক্লাস সাবমেরিন কেনার প্রস্তাবে ভারতের ডিফেন্স অ্যাকুইজিশন কাউন্সিল ইতিমধ্যেই সম্মতি দিয়েছে।
এই ২৬টি রাফাল জেটের মধ্যে ২২টি হবে একক আসনের রাফাল মেরিন এয়ারক্র্যাফট আর বাকি চারটি টুইন-সিটার ট্রেনার এয়ারক্র্যাফট। এর আগে ২০১৬ সালে ফ্রান্সের ডাসোঁ এভিয়েশন থেকে মোট ৩৬টি রাফাল যুদ্ধবিমান কেনার জন্য ভারতের নরেন্দ্র মোদি সরকার চুক্তিতে সই করেছিল।
সেই চুক্তিতে বিরাট অঙ্কের আর্থিক দুর্নীতি হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছিল কংগ্রেসসহ ভারতের বিরোধী দলগুলো। কিন্তু পরে দেশের সুপ্রিম কোর্ট সেই অভিযোগ খারিজ করে দেয়। যদিও ফ্রান্সে এখনও সেই অভিযোগ নিয়ে সমান্তরাল তদন্ত চলছে।
ওই চুক্তি অনুযায়ী ভারতের মোট যে ৩৬টি রাফাল জেট পাওয়ার কথা ছিল, কয়েক কিস্তিতে তার সবগুলোরই ডেলিভারি হয়ে গেছে।
২০২২ সালের ডিসেম্বরে যখন ৩৬তম তথা শেষ রাফালটি ভারতে পৌঁছায়, তখন আমিরাতে সেটির রিফিউয়েলিং-য়ের ছবি পোস্ট করে ভারতের বিমানবাহিনী টুইট করেছিল, দ্য প্যাক ইজ কমপ্লিট!
তবে শেষ ডেলিভারির মাত্র ছয় সাত মাসের মধ্যেই ভারত আবার ফ্রান্স থেকে নতুন করে ২৬টি রাফাল যুদ্ধবিমানের অর্ডার দিতে যাচ্ছে– যে সিদ্ধান্তকে সামরিক ও কৌশলগত দিক থেকে খুবই তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
কেন ভারত নতুন করে আরও একপ্রস্ত রাফাল জেট কেনার সিদ্ধান্ত নিল- এমন প্রশ্নে ভারতীয় বিমান বাহিনীর সাবেক প্রধান ও প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞ, এয়ার চিফ মার্শাল (অবসরপ্রাপ্ত) অরূপ রাহা ব্যাখ্যা দিয়েছেন। যখন ভারত সরকার ২০১৬ সালে ৩৬টি রাফাল কেনার জন্য চুক্তি করে, তখন তিনিই বিমান বাহিনীর প্রধান ছিলেন।
অরূপ রাহা বলেন, প্রথম যখন রাফাল জেট কেনার কথাবার্তা শুরু হয়, তখন তো ১২৬টা পাওয়ার কথা ছিল। সেই জায়গায় চুক্তি হয়েছে মাত্র ৩৬টার, ফলে সশস্ত্র বাহিনীর প্রয়োজন এখনও পুরোটা মেটেনি।
তিনি আরও বলেন, এখন এয়ারফোর্সকেও তাদের চাহিদা অনুযায়ী বাড়তি ফাইটার জেট দিতে হবে, সেটা রাফাল না-হলেও কোনও ফোর পয়েন্ট ফাইভ জেনারেশন অত্যাধুনিক এয়ারক্র্যাফট হতে হবে– যা দুনিয়ার সেরা। কিন্তু আপাতত এই যে নতুন ২৬টা রাফাল, এগুলো এয়ারফোর্স নয়– কাজে লাগানো হবে ভারতের নৌবাহিনীতে।
ভারত সরকার যে আরও একবার রাফাল কেনার পক্ষেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তার পেছনে দ্বিতীয় কারণটাও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। এর কারণ হলো ফ্রান্স এক্ষেত্রে ভারতের মাটিতে অনেকটা প্রযুক্তি হস্তান্তরে রাজি হয়েছে।